প্রথম রোজার সংবাদ দিলে জাহান্নামের আগুন হারাম মর্মে বর্ণিত হাদিসটি বানোয়াট ও জাল


প্রশ্ন
: “যে ব্যক্তি প্রথম রোজার সংবাদ দিবে তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যাবে” বর্তমানে ফেসবুকে এই কথাটা বেশ প্রচার হচ্ছে। কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে এ বিষয়ে আপনার একটি পোস্ট চাই। যাতে করে সবাই সঠিকটা জানতে পারে।

উত্তর: এ কথা সত্য যে, রমজান ঘনিয়ে এলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই জাতীয় হাদিসটি প্রচারের হিড়িক পড়ে যায়। প্রচার করা হয় যে, এ বছর অমুক তারিখ থেকে রমজান মাসের রোজা শুরু হবে। অথচ তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা। অর্থাৎ এটি হাদিসের নামে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে মিথ্যাচার ছাড়া কিছু নয়। তাছাড়া রমজান মাসের সূচনা চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল-যা জানার জন্য সরকার নির্ধারিত চাঁদ দেখা কমিটি বা আদালতের ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে হয় । সুতরাং তা গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির হিসেবে অগ্রিম সংবাদ দেওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং কেউ যদি অনেক আগে থেকে এই ঘোষণা প্রচার করে তাহলে তা হবে আরেকটি মিথ্যাচার।

◆ এ প্রসঙ্গে বিশ্ব বিখ্যাত ফতোয়া বিষয়ক ওয়েবসাইট Islamqa-এ বলা হয়েছে,

لم يذكره من صنف في فضل رمضان من العلماء، ولو من باب التنبيه على عدم صحته، كما لم يذكره من صنف في الأحاديث الضعيفة والموضوعة؛ لذلك يبدو أنه وُضع حديثًا.

“যে সকল আলেমগণ রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বই লিখেছেন তাদের কেউ এই হাদিসটি উল্লেখ করেননি। এটি যে বিশুদ্ধ নয় সে ব্যাপারে সতর্ক করার জন্যও কেউ উল্লেখ করেননি। অনুরূপভাবে দুর্বল ও বানোয়াট হাদিস সংকলনকারীগণ ও তা (এ সংক্রান্ত কোনও গ্রন্থেই উল্লেখ করেননি।) এতেই প্রমাণিত হয় যে, এটি সাম্প্রতিক কালের বানানো হাদিস।”
এরপর আরও লেখা হয়েছে, “সুতরাং এর উপরে ভিত্তি করে বলবো, এই হাদিস প্রচার বা শেয়ার করা জায়েজ নেই মানুষকে এ বিষয়ে সতর্ক করার উদ্দেশ্য ছাড়া।”

◆ কারা এসব বানোয়াট হাদিস প্রচার করে? অজ্ঞতা বশত: কেউ তা করে থাকলে তার জন্য করণীয়:

প্রকৃতপক্ষে, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, যারা শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় ও বিভিন্ন গ্রুপে মেসেজ ফরওয়ার্ড করে শর্টকাট পদ্ধতিতে জান্নাতে যেতে চায় এটি তাদের বানানো হাদিস। আর ধর্মীয় বিভিন্ন বক্তব্যের প্রতি মানুষের এক ধরণের দুর্বলতা রয়েছে। সেই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে সস্তা লাইক-কমেন্ট কামানোর ধান্ধায় এসব কথা হাদিস বলে প্রচার করে এক শ্রেণির লোক। এভাবেই শয়তান দ্বীনের সঠিক জ্ঞান বঞ্চিত মানুষের সাথে ধর্মের নামে ধোঁকাবাজি করে চলেছে।

যাহোক কেউ যদি অজ্ঞতাবশত এই জাতীয় হাদিস ইতোপূর্বে প্রচার করে থাকে তাহলে তার জন্য আবশ্যক হলো, অনতিবিলম্বে তা ডিলিট করা এবং এটি যে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা।

 ✪ আল্লাহর রসুলের নামে মিথ্যাচারে ভয়াবহতা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস প্রচারের পূর্বে সতর্কতা অবলম্বন অপরিহার্য:

মনে রাখা কর্তব্য যে, মানুষের সাথে সাধারণ মিথ্যা কথা এবং আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামে মিথ্যা কথা এক নয়। সাধারণ মিথ্যা কথা হারাম, কবিরা গুনাহ এবং মুনাফেকির বৈশিষ্ট্য। কিন্তু হাদিসের নামে মিথ্যাচার করার পরিণতি এর থেকেও ভয়াবহ। কেউ জেনে বুঝে তা করলে তার পরিণতি জাহান্নাম।

إنَّ كَذِبًا عَلَيَّ ليسَ كَكَذِبٍ علَى أَحَدٍ، مَن كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ

“আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমার প্রতি মিথ্যারোপ করা তোমাদের কারো প্রতি মিথ্যারোপ করার মত নয়। যে ব্যক্তি জেনেশুনে ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্ধারণ করে নেয়।” [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)। মুকাদ্দামাহ (ভূমিকা), পরিচ্ছেদ: ২. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর মিথ্যারোপ গুরুতর অপরাধ]

কেননা এর মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে ভুল বার্তা সমাজের ছড়িয়ে পড়ে এবং এভাবে ক্রমান্বয়ে ইসলামে বিকৃতি সাধিত হয়।
তাই বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলাম বিষয়ে কোন কিছু প্রচারের আগে তার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করা এবং তার বিশুদ্ধতার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া হওয়া অপরিহার্য। অন্যথায় ইসলাম সম্পর্কে ভুল বার্তা প্রচার ও ইসলাম বিকৃতির অপরাধে দণ্ডিত হওয়ার পাশাপাশি তা প্রচারকারীর আমলনামায় গুনাহের জারিয়া বা প্রবহমান গুনাহ হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে। যত মানুষ এর দ্বারা বিভ্রান্ত হবে তাদের সমপরিমাণ গুনাহ প্রচারকারীর আমলনামায় লিপিবদ্ধ করা হবে। সুতরাং এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করা আবশ্যক।

আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং ইসলাম সম্পর্কে সব ধরনের বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
মন্তব‍্য নেই
কমেন্ট করুন
comment url