ইসলামি বিধানের শাসন ও ন্যায়বিচার | হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর নীতিমালা
সামাজিক অস্থিরতা আর অবক্ষয় যেন পাল্লা দ্বারা বাড়ছে। এর মূল রিজন হলো ন্যায়বিচারের অভাব। কেননা লক্ষ্য যায় বিশাল ধরনের ক্রাইম করার পরও অপরাধীকে একটি মহল সার্বিক সাহায্য করে থাকে।
অথচ পবিত্র কুরআনের শিক্ষা হচ্ছে-ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যদি আপন পিতা-মাতার বিরুদ্ধেও সাক্ষ্য দিতে হয় তা যেন দেওয়া হয়। আর আমরা আজ করছি উলটো, অপরাধী নিজের আত্মীয়স্বজন হলে তাকে কীভাবে রক্ষা করা যায় সেই উদ্যোগে রত হই। আজ যারা কমিউনিটি এবং দেশে নানা কুকাজ করছে তারা তো কোনো না কোনো পরিবারেরই সদস্য।
অপরাধীদের পরিজন যদি শুরুতে সোচ্চার হতো তাহলে অপরাধের মাত্রা এমনিতেই পর্যাপ্ত যেত তা সত্ত্বেও আমরা তা করছি না। এই জন্যই প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইসলাম অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেছে। প্রভু পাক হচ্ছেন সর্বাপেক্ষা সুবিশাল ন্যায়বিচারক। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা যেহেতু আল্লাহরই কাজ, একারণে ইসলামি-রাষ্ট্রের প্রধান এবং শাসনকার্যে নিযুক্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে আল্লাহপাক এই নির্দেশই প্রদান করেন যে, তারা যেন ন্যায়পরায়ণতা, দক্ষতা এবং নিরপেক্ষতার সাথে নিজেদের উচিত পালন করেন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে যারা ধর্মবিশ্বাস এনেছ! আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সাক্ষ্যদাতা পরিমাণে তোমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠাকারী হও, এমনকি সেই ফৌজদারি ঘটনা সম্পর্কে (থানায়) প্রদত্ত বিবৃতি তোমাদের নিজেদের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে গেলেও। যার সম্মন্ধে সাক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে, সে ধনশালী হোক বা গরিব, প্রভু উভয়েরই সর্বোত্তম অভিভাবক। অতএব, তোমরা যাতে ন্যায়বিচার করতে উপযুক্ত হও, সে জন্য তোমরা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ কর না আর তোমরা যদি পেঁচানো কথা বল অথবা ঠিক এড়িয়ে যাও, তবে মনে রেখ, তোমরা যা কর সে বিষয়ে নিশ্চয় প্রভু পুরোপুরি পরিচিত আছেন’ (সূরা নিসা : ১৩৫)।
এ আয়াতে কেবলমাত্র সুবিচারের কথাই স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়নি, বরং প্রতিষ্ঠার অপরিহার্য শর্তাবলিও উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, কেবলমাত্র ইনসাফ প্রতিষ্ঠাই নয়, বরং সুবিচারের পতাকাকেও সমুন্নত রাখার জন্য হবে। যেখানেই ভূলুণ্ঠিত থেকে দেখা যাবে, সেখানে তা সমুন্নত করাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। মামলায় কোনো পক্ষের হার-জিতের জন্য সাক্ষ্য নয়, বরং শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যই সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য হবে। কেননা, সত্য ফৌজদারি ঘটনা সম্পর্কে (থানায়) প্রদত্ত বিবৃতি ব্যতিরেকে প্রতিষ্ঠা করা পসিবল নয়। যথার্থ এজাহার দিতে গিয়ে যদি নিজেদের দরকারে আঘাত লাগে পক্ষান্তরে ব্যক্তিগত পিতা-মাতার বা নিকটাত্মীয় পরিজনের প্রতিকূলেও যদি যায়, তা সত্ত্বেও ঠিক ফৌজদারি ঘটনা সম্পর্কে (থানায়) প্রদত্ত বিবৃতি দেওয়ার জন্য হবে। ন্যায়বিচারের শীর্ষ মানদণ্ড ব্যতীত সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া পসিবল নয়। এজন্য ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হলে একমাত্র সত্যকেই মাধ্যম বানাতে হবে।
ইসলাম একটি শান্তিপ্রিয় আইন ও এর শিক্ষা অত্যন্ত উচ্চাঙ্গের। ইসলামের শিক্ষাগুলোর মধ্যে ১টি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে সমাজ ও দেশে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে বিশ্বে এই পর্যন্ত যত নবি (আ.)-এর আগমন ঘটেছে, তাদের প্রত্যেককে আল্লাহতায়ালা বিশেষ যেসব দায়িত্ব দিয়েছেন তার ভিতরে সর্বশ্রেষ্ঠ রেসপন্সিবিলিটি হচ্ছে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহতায়ালার নির্দেশ অনুসারে সকল নবিই (আ.) দেশে সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করেছেন ও এক্ষেত্রে সফলও হয়েছেন।
ইসলামে ন্যায়বিচারের শিক্ষা এরূপ এক অনিন্দ্য চমৎকার শিক্ষা, যা ন্যায়পরায়ণ প্রত্যেক অমুসলিমও শুনে প্রশংসা না করে পারে না। পৃথিবীতে ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত করাই মহানবি (সা.)-এর আগমনের ফোকাস ও তিনি আপন আমল মাধ্যমে সব জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষমও হয়েছিলেন। আল্লাহতায়ালার তাজ্জব শিক্ষা ও ইসলামের সুন্দর এবং পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির বহিঃপ্রকাশ তখনই পসিবল হবে, যখন প্রত্যেক মুসলমান আল্লাহপাকের প্রতিটি আদেশের উপর আমল করবে।
ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজেদের ঘর, সমাজ, আপন-পর, এমনকি শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সবার সাথে ন্যায়সুলভ ব্যবহারের মাধ্যমেই আমরা মহানবি (সা.)-এর যথাৰ্থ অনুসারী বলে দাবি করতে পারি। সর্বক্ষেত্রে আমরা যখন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব, তখনই আমরা আল্লাহর প্রেমিকও থেকে পারব আর খায়রে উম্মত হিসাবে নিজদের প্রকাশ করতে পারব ও আল্লাহর দরবারে মুমিন হিসাবে হিসাবনিকাশ করা হব।
সত্য ও ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য আমাদের যদি নিজস্ব আত্মীয়স্বজন এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের অসন্তুষ্টিরও মুখোমুখি থেকে হয়, তারপরও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। আজকে ন্যায়বিচারের বড়ই অপ্রাচুর্য আর এ কারণেই সর্বত্র বিশৃঙ্খলা, সোশাল অস্থিরতা আর অরাজকতা নোটিশ দিচ্ছে। সবাইকে আল্লাহতায়ালা ইনসাফ করার তৌফিক দান করুন।
লেখক : ইসলামি রিসার্চার এবং কলামিস্ট